বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে সরকার বিভিন্ন খাত যেমন—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতিতে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। এই ব্যয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে জনগণের প্রদত্ত আয়কর। আয়কর শুধু একটি দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সচেতন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার। আর এই কর প্রদানের প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কর রিটার্ন (Tax Return) দাখিল। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশে কর রিটার্ন দাখিলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।
কর রিটার্ন হচ্ছে একটি নথি, যেখানে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট আয়বর্ষে কত আয় করেছেন, কত কর দিয়েছেন বা দেন, তার বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এ দাখিল করতে হয়, সাধারণত প্রতিবছরের ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে।
বাংলাদেশে কর রিটার্ন দাখিলের গুরুত্ব
বাংলাদেশের আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী, যারা নির্দিষ্ট সীমার বেশি আয় করেন, তাদের জন্য কর রিটার্ন দাখিল করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিল না করলে বা ভুল তথ্য প্রদান করলে জরিমানা, বিলম্ব ফি এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
কর রিটার্ন একটি আয়ের বৈধ প্রমাণপত্র। এটি ব্যবহৃত হয়:
-
ব্যাংক ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড পেতে
-
বিদেশ ভ্রমণের ভিসার আবেদন করতে
-
সরকারি ও বেসরকারি টেন্ডারে অংশ নিতে
-
জমি, ফ্ল্যাট বা গাড়ি কেনাবেচায়
টিআইএন সুবিধা ও সেবা প্রাপ্তি
কর রিটার্ন দাখিলের জন্য ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN) বাধ্যতামূলক। যাদের TIN আছে এবং নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করেন, তারা:
-
উৎসে কম হারে কর পরিশোধ করতে পারেন
-
ট্রেড লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদিতে অগ্রাধিকার পান
-
ব্যবসা পরিচালনায় সরকারি সুবিধা পেতে সক্ষম হন
জাতীয় উন্নয়নে অবদান
প্রত্যেক করদাতার করের অর্থ রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে ব্যয় হয়। যেমন:
-
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে
-
সড়ক ও সেতু নির্মাণে
-
সামাজিক সুরক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে
নিয়মিত কর রিটার্ন দাখিল করে একজন নাগরিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসনে অংশগ্রহণ করেন।
জরিমানা ও আইনি ঝুঁকি থেকে মুক্তি
যারা সময়মতো কর রিটার্ন দাখিল করেন না, তাদেরকে আর্থিক জরিমানা, বিলম্ব ফি এবং মাঝে মাঝে কর অডিট এর মুখোমুখি হতে হয়। তাই নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করে এসব ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
অতিরিক্ত কর ফেরত পাওয়ার সুযোগ
বিভিন্ন উৎসে যেমন—ব্যাংকের সুদ, চাকরির আয় ইত্যাদিতে অতিরিক্ত কর কেটে নেওয়া হয়। যদি কোনো করদাতা রিটার্ন দাখিল করেন এবং প্রমাণ করতে পারেন যে বেশি কর কাটা হয়েছে, তবে তিনি সেই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত (Tax Refund) পেতে পারেন।
নিয়মিত কর প্রদান ও রিটার্ন দাখিল একজন নাগরিক বা ব্যবসার প্রতি সমাজ ও সরকারের আস্থা বাড়ায়। এতে করে ব্যাংক, বিনিয়োগকারী, বিদেশি সংস্থা বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়।
বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা ধীরে ধীরে আধুনিক ও ডিজিটাল হচ্ছে। সরকার জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে অনলাইন রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইএন সেবা, এবং কর মেলা-এর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত আইন মেনে সময়মতো কর রিটার্ন দাখিল করা। এটি শুধু একটি দায়িত্ব নয়, বরং দেশের অগ্রগতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি উপায়।
