আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return বা ITR) শব্দটি শুনলেই অনেকের মনে ভয়, চিন্তা বা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বিশেষ করে যারা নতুন ইনকাম ট্যাক্স ফাইল করতে যাচ্ছেন, বা যাদের আয় নিয়মিত নয়, তাদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে ভয় কাজ করে। কিন্তু বাস্তবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা শুধু আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, এটি একটি দায়িত্ববান নাগরিকের চিহ্ন হিসেবেও গণ্য হয়। এছাড়া এর অনেক সুবিধাও রয়েছে, যা অনেকেই জানেন না।
আয়কর রিটার্ন কী?
আয়কর রিটার্ন হল একটি রিপোর্ট, যেখানে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের মোট আয়, করযোগ্য আয়, প্রদত্ত কর, করছাড় এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্য উল্লেখ থাকে। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বরাবর জমা দিতে হয়।
কাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক?
বাংলাদেশে যাদের বার্ষিক আয় নির্ধারিত কর-মুক্ত সীমার বেশি (২০২৪-২৫ করবছরে সাধারণ ব্যক্তির জন্য এই সীমা ছিল ৩,৫০,০০০ টাকা), তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়াও নিচের ব্যক্তিরা বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন জমা দিবেন:
-
টিন (TIN) যাদের আছে
-
যাদের মালিকানায় ১টি বা একাধিক গাড়ি আছে
-
যাদের বাড়িভাড়া, দোকানভাড়া বা বিনিয়োগ থেকে আয় আছে
-
যাদের ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ আছে
-
ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার – যেকোনো ধরনের আয় যাদের নিয়মিত
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে কী হতে পারে?
-
জরিমানা ও সুদ: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন না দিলে এনবিআর থেকে জরিমানা ও সুদ ধার্য করা হয়।
-
সরকারি সুবিধা বঞ্চিত: টেন্ডার, ব্যাংক ঋণ, পাসপোর্ট নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র (Acknowledgement Receipt বা Tax Clearance Certificate) প্রয়োজন হয়।
-
আইনি সমস্যা: দীর্ঘদিন রিটার্ন না দিলে তা কর ফাঁকির অভিযোগে গড়াতে পারে, যা আইনি জটিলতার কারণ হতে পারে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুবিধা কী কী?
-
ব্যক্তিগত আইনি সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা
আপনি যদি নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করেন, তাহলে আপনার আয় ও সম্পদ আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে নিরাপদ থাকে। -
ব্যাংক ঋণ ও ফিনান্সিং সুবিধা
ব্যাংক থেকে লোন, কার্ড ইত্যাদি পেতে হলে রিটার্ন লাগবেই। এটি আপনার অর্থনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। -
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সহজ হয়
বিদেশে পড়াশোনা, ভিসার আবেদন, চাকরি কিংবা ব্যবসায়িক বিনিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই রিটার্ন জমা দেওয়া ব্যক্তিদের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়। -
ট্যাক্স ক্রেডিট বা রিফান্ড পাওয়া যেতে পারে
আপনি যদি বেশি কর দিয়ে থাকেন, তবে সঠিকভাবে রিটার্ন দাখিল করলে ট্যাক্স রিফান্ডও পেতে পারেন।
রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা
প্রতিবছর সাধারণত জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সময় বাড়ানো হয়।
রিটার্ন দাখিল কীভাবে করবেন?
-
নিজে এনবিআর-এর eReturn পোর্টালে গিয়ে রিটার্ন পূরণ ও দাখিল করতে পারেন
-
অভিজ্ঞ একজন ট্যাক্স কনসালটেন্ট বা আইনজীবীর সাহায্য নিতে পারেন
-
আয়কর অফিসে গিয়েও রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব
উপসংহার
আয়কর রিটার্ন নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, বরং এটি নিয়মিতভাবে করলে আপনি আইনি ও আর্থিকভাবে অনেক সুবিধা পাবেন। এটি শুধু সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে না, বরং আপনাকে একজন সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাই আর দেরি না করে, আজই আপনার আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করুন এবং সময়মতো দাখিল করুন।
