প্রতি বছরের মতো এবারও ১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ অর্থবছরের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় শুরু হয়েছে। অনেক করদাতা আছেন যারা কর রিটার্ন দাখিল করতে আগ্রহী, কিন্তু কোন কোন কাগজপত্র লাগবে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকেন। সঠিক ডকুমেন্টস প্রস্তুত না থাকলে রিটার্ন প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো আয়কর রিটার্ন এসেসমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ডকুমেন্টসের একটি চেকলিস্ট, যা ব্যক্তি, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য আয়ের উৎসভিত্তিকভাবে সাজানো হয়েছে।
১. সকল করদাতার জন্য (ব্যক্তিগত তথ্য)
এই তথ্যগুলো সব ধরনের করদাতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য:
-
ই-টিআইএন সার্টিফিকেটের ফটোকপি
-
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
-
পাসপোর্ট সাইজের ছবি
-
বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা
২. চাকরিজীবীদের জন্য
চাকরিজীবীদের আয়ের উৎস ও কর কর্তনের প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হবে:
-
স্যালারি সার্টিফিকেটের ফটোকপি
-
উৎসে কর কর্তন সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
-
প্রভিডেন্ট ফান্ড সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
৩. ব্যবসায়ীদের জন্য
যেসব ব্যক্তি ব্যবসা পরিচালনা করেন, তাদের জন্য প্রয়োজনীয়:
-
ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি
-
ওপেনিং ক্যাপিটালের পরিমাণ
-
বার্ষিক ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
-
লোন স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
৪. ভাড়া থেকে আয়ের জন্য
যারা বাসা বা দোকান ভাড়া দিয়ে আয় করেন, তাদের জন্য দরকার:
-
ভাড়া চুক্তিপত্রের ফটোকপি
-
ভাড়া রশিদের ফটোকপি
-
পৌর কর ও ভূমি রাজস্ব রশিদের ফটোকপি
-
ইন্স্যুরেন্স স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
-
ব্যাংক ও লোন স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
-
অন্যান্য প্রাপ্তির দলিল (যদি থাকে)
৫. আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয়ের জন্য
যেমন: সঞ্চয়পত্র, সুদ, ডিভিডেন্ট ইত্যাদি থেকে আয়
-
সঞ্চয়পত্রের প্রত্যয়নপত্র
-
সুদ আয়ের স্টেটমেন্ট
-
বন্ড/ডিবেঞ্চার সার্টিফিকেট
-
ডিভিডেন্ট সার্টিফিকেট
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
৬. কৃষি থেকে আয়ের জন্য
-
কৃষি সম্পদের দলিলপত্র (যদি থাকে)
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
৭. মূলধনি আয়ের জন্য
যেমন: জমি, ফ্ল্যাট বা শেয়ার বিক্রয়
-
সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল
-
উৎসে কর প্রদানের চালান
-
শেয়ার বিক্রয়ের সার্টিফিকেট
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
৮. অন্যান্য আয়ের জন্য
যেসব আয়ের নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি নেই:
-
আয় সংক্রান্ত কাগজপত্র
-
উৎসে কর কর্তন সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
-
ব্যাংক ও লোন স্টেটমেন্ট (যদি থাকে)
৯. সম্পদ ও লোন সংক্রান্ত ডকুমেন্ট
-
জমি, বাড়ির দলিল
-
গাড়ির কাগজপত্র
-
সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, এমএসএস, এফডিআর স্টেটমেন্ট
-
বন্ড/ডিবেঞ্চার সার্টিফিকেট
-
প্রভিডেন্ট ফান্ড স্টেটমেন্ট
-
অলঙ্কারের বিবরণ (পরিমাণ ও ধরন)
-
ফার্নিচার ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর বিবরণ
-
কোম্পানি শেয়ার ও অংশীদারিত্বের দলিল
-
অন্যান্য সম্পদের তথ্য
১০. বিনিয়োগ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট
-
সঞ্চয়পত্রের প্রত্যয়নপত্র
-
লাইফ ইন্স্যুরেন্স ডকুমেন্ট
-
ডিপিএস সার্টিফিকেট
-
শেয়ার সার্টিফিকেট
-
অন্যান্য বিনিয়োগের দলিলপত্র
আয়কর রিটার্ন দাখিল একটি আইনগত দায়িত্ব এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে এটি পালন করা উচিত। উপরের ডকুমেন্ট চেকলিস্ট অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলে করদাতারা সহজেই ও দ্রুত রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। মনে রাখবেন, সঠিক তথ্য প্রদান এবং সঠিক দলিল দাখিলই একটি সফল এসেসমেন্টের মূল চাবিকাঠি।
